শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

বরিশালে সাদিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, নজরদারিতে কনস্টেবল স্বামী

বরিশালে সাদিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, নজরদারিতে কনস্টেবল স্বামী

বরিশাল প্রতিনিধি:

বরিশাল মহানগরের বাসা থেকে কনস্টেবলের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার সাথীর (২৪) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদন হাতে পেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী বরিশাল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম সাইফুলকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

বরিশাল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে মাইনুল ইসলাম সাইফুলের সম্পৃক্ততা থাকলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে। আইন সবার জন্য সমান। আইনের লোকের জন্য তা আরও কঠিন। সাইফুল আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, ‘সাথীর লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি আত্মহত্যা করেছে। এরপর আইন প্রয়োগের বিষয়টি আসবে। এ জন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষা করতে হবে।’

জানা গেছে, কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর বাদুরী গ্রামের সোহরাব ফরাজীর ছেলে। সাথী বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের প‚র্ব ভ‚তেরদিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মৃধার মেয়ে। তাদের দুই জনের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মেয়ে সাইমুনকে নিয়ে সাথী একাই ছিলেন। পৃথক হওয়ার পর সাইফুলের সঙ্গে প্রেমের সঙ্গে গড়ে ওঠে। এরপর তারা বিয়ে করেন।
নিহত সাথীর বাবা সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘সাইফুল বড়মাপের প্রতারক। সে চাকরি এবং বিয়েসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলেছে। আর তার মিথ্যাচার নিয়ে সাথীর সঙ্গে কলহ লেগেই থাকতো। আগের স্ত্রীসহ দুই সন্তান রয়েছে তার। সে চাকরি করে কনস্টেবল পদে। আমাদের জানিয়েছে এসআই পদে। এমনকি সাথীকে চাকরি দিতে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। চাকরি না দেওয়ায় সেই টাকা চাওয়ায় সাথীর কাছে যৌতুক বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাথীর সঙ্গে দ্বন্দ¦ চলছিল।’

তিনি দাবি করেন, ‘সাইমুনকে নিয়ে সাথী আলাদা হওয়ার পর তাদের সম্মতিতে বিয়ে হয়। এরপর তারা বরিশালে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। সাইফুলের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে সাথী সাবলেট থাকা শুরু করে। এর আগে মাইনুলের নির্যাতনে কয়েকবার সাথী অসুস্থ হয়ে পড়ে।’

বাবা সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ, ‘সাথী আত্মহত্যা করলে ওর ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে আটকানো থাকার কথা। কিন্তু পুলিশ এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দরজা খোলা। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাÐ, তা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। যদি আত্মহত্যা করতো তাহলে তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসতো না। সাইমুনকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় একা ছিল, তখন মাইনুল সাথীকে হত্যা করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচার চালায়।’

সাথীর ভাই মো. রতনের দাবি, সাইফুল আগের বিয়ের কথা গোপন করে তার বোনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে। এরপর সাথীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা নেয়। ওই টাকা চাওয়ায় মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাথীর সঙ্গে দ্ব›দ্ব চলছিল সাইফুলের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, সাথীকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার চালানো হয়। আমরা পুলিশের কাছে সাইফুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার এজাহার দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকার ডা. শাহজাহান হোসেনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে সাথীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফ্লাটে সাথী তার মেয়েকে নিয়ে সাবলেটে বসবাস করতেন। তাদের সঙ্গে থাকতেন স্বর্ণালী নামের আরেক তরুণী। ঘটনার পর থেকে সাইফুল ও স্বর্ণালী পলাতক।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana